ছবি সংগৃহীত
ডা. এ. কিউ. এম. রেজা : বাংলাদেশে হৃদরোগ এখন একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগজনিত জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্বাস্থ্যকর খাবার, ধূমপান, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, মানসিক চাপ এবং ব্যায়ামের অভাব হৃদরোগ বৃদ্ধির প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ হৃদরোগে মারা যাচ্ছেন। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আগে হৃদরোগকে মূলত ধনী মানুষের রোগ বলা হলেও এখন গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষও এ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।
হৃদরোগে ব্লকের প্রাথমিক পর্যায়ে শারীরিক পরিশ্রম করলে অনেক সময় রোগীরা বুকের মাঝখানে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করেন। বুক ভারী হয়ে যাওয়া, চাপ অনুভব করা, বাম হাত বা কাঁধে ব্যথা, চোয়ালে ব্যথা, এমনকি পেটের উপরের অংশেও অস্বস্তি—এসবই হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। অনেকে এসব উপসর্গকে হালকাভাবে নেন, যার ফলে সমস্যা দ্রুত গুরুতর হয়ে ওঠে। পরবর্তী ধাপে অতিরিক্ত ঘাম, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা কিংবা জ্ঞান হারানোর মতো বিপজ্জনক পরিস্থিতি দেখা দেয়। এমন অবস্থায় রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া জরুরি, যেখানে ইসিজি ও রক্ত পরীক্ষা করে হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত করা যায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে সময়ই সবচেয়ে বড় বিষয়। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়, রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা তত বাড়ে। বর্তমানে এনজিওগ্রামের মাধ্যমে হার্টের ব্লক চিহ্নিত করে তা অপসারণ করা হয় এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়। এটি একটি আধুনিক ও কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। কিছু ক্ষেত্রে ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত জমাট ভেঙেও চিকিৎসা দেওয়া হয়। কোন চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার হবে তা নির্ভর করে রোগীর অবস্থা ও চিকিৎসকের সিদ্ধান্তের ওপর।
প্রতি বছর ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব হৃদয় দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘ডোন্ট মিস অ্যা বিট’। প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে, হৃদরোগের ছোট্ট কোনো উপসর্গও অবহেলা করা যাবে না। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সময়মতো চিকিৎসা এবং জীবনধারায় পরিবর্তনের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব।
দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে হৃদরোগ চিকিৎসা সুবিধা থাকলেও রোগীর চাপ সবসময়ই বেশি থাকে। অন্যদিকে, গ্রামীণ এলাকায় উন্নত কার্ডিয়াক সেবার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে রোগীরা দেরিতে চিকিৎসা নেন, আর তখন জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।
রাজধানী ঢাকায় উন্নত কার্ডিয়াক কেয়ারের জন্য এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা একটি পরিচিত নাম। এখানে রয়েছে আধুনিক ক্যাথল্যাব, কার্ডিয়াক সার্জারি সুবিধা, ২৪ ঘণ্টা জরুরি হার্ট কেয়ার ইউনিট এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসক দল। রোগীদের দ্রুত ও মানসম্মত সেবা দেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালটি সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করছে। তারা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসচেতনতা কর্মসূচি আয়োজন করছে, যেখানে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, ধূমপান ত্যাগ, নিয়মিত ব্যায়াম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
শুধু চিকিৎসাই নয়, এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা হৃদরোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরিতেও নিয়মিত কাজ করছে। তারা বিভিন্ন সেমিনার, ক্যাম্প ও প্রচার কার্যক্রম আয়োজন করে মানুষকে সচেতন করছে, কীভাবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে, কীভাবে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কেন নিয়মিত ব্যায়াম জরুরি এবং কীভাবে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা মনে করেন, জীবনধারায় পরিবর্তন আনলেই হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
বাংলাদেশে হৃদরোগ এখন একটি জাতীয় স্বাস্থ্য সমস্যা। তবে সচেতনতা বৃদ্ধি, জীবনধারায় পরিবর্তন এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করলে এ রোগ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশ্ব হৃদয় দিবসের প্রতিপাদ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় সতর্কতা, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও সময়মতো চিকিৎসাই হৃদরোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
লেখক:
সিনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যান্ড কোঅর্ডিনেটর
ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা । সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন